ঢাকার গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বিনিরাইল গ্রামে প্রতি বছর অগ্রহায়ণের ধান কাটা শেষে পৌষ-সংক্রান্তি ও নবান্ন উৎসবকে মাথায় রেখে এই মেলার আয়োজন করা হয়। । ঐতিহ্যবাহী এই মেলার অন্যতম আকর্ষণ 'মাছ'। তাই মাছ মেলা নামেও এর পরিচিত আছে। প্রায় আড়াইশ বছরের পুরনো এই মেলা প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়। মাছ মেলাকে স্থানীয়রা জামাই মেলাও বলে থাকেন। কারণ স্থানীয় জামাই এবং শ্বশুরদের মধ্যে চলে বড় মাছ কেনার প্রতিযোগিতা।
বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিক্রেতারা এখানে মাছ নিয়ে আসেন। দূর দূরান্ত থেকে ক্রেতারাও ছুটে আসেন বড়ো মাছ কেনার টানে। শতাধিক দোকানের মাছ বিক্রেতারা নানা অঙ্গভঙ্গি করে সুর ধরে ডেকে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কেউ কেউ বড় আকৃতির মাছ উপরে তুলে ধরে ক্রেতাদের ডাকেন। ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয়, কে কতো বেশি ওজনের বা বড় মাছ মেলায় আনতে পারেন। অন্যদিকে স্থানীয় জামাই-শ্বশুরদের মধ্যেও হয় সেই বড় মাছ কেনার নিরব প্রতিযোগীতা। এই মেলায় মাছের সাথে বস্ত্র, হস্ত ও কুটির শিল্পের নানা পণ্যেরও আমদানি হয়। মেলার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ বাহিনীর পাশাপাশি কাজ করছে স্থানীয়রাও।
দেশি রুই, কাতল, বোয়াল, আইড়, বাঘাইর, চিতল, কালবাউশ ও রিটা মাছের সমাগম হয়। এছাড়া কার্প জাতীয় নানা মাছের আমদানি হয়েছে। এক কেজি থেকে শুরু করে বিশ কেজি পর্যন্ত এসব মাছের দাম ওঠে ৪০০ টাকা থেকে শুরু করে পনের হাজার টাকা পর্যন্ত। বিক্রিও হয় প্রচুর।
মেলার মাছ বিক্রেতাদের কথায়, ইতিহাস-ঐতিহ্যের কারণে বিনিরাইলের মাছের মেলায় কেনার চেয়ে দেখতে আসা মানুষের ভীড় বেশী। বেচা-কেনার থেকে পারস্পরিক দেখাশোনার, আনন্দটাই আমাদের পাওনা।
আয়োজক কমিটি জানান, প্রায় আড়াইশ বছর যাবৎ মেলাটি আয়োজন হয়ে আসছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ মেলাটি একটি সর্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে। তাই বেড়েছে মেলার পরিধিও। এখানে শুধু মাছ নয়, এ মেলাকে কেন্দ্র করে বস্ত্র, হস্ত, চারু-কারু, প্রসাধনী, ফার্নিচার, খেলনা, তৈজষপত্র, মিষ্টি ও কুটির শিল্পের নানা পণ্যের দোকান বসে। মেলাকে ঘিরে বিনিরাইলের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে বিরাজ করে উৎসবের আমেজ। মেলা উপলক্ষে মেয়ে-জামাইকে নিমন্ত্রণ করে বাড়িতে ডেকে আনাও এই এলাকার মানুষের রীতিতে পরিণত হয়েছে।